نوراني/ نازِرَة (নূরানী ও নাজেরা)
নূরানী এবং নাজেরা হলো দুটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যক্রম, যা শিশুদের জন্য ইসলামি শিক্ষার প্রাথমিক স্তর হিসেবে পরিচিত। এই দুটি পাঠ্যক্রমে শিশুদের মূলত কোরআন শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ দেওয়া হয় এবং তার পাশাপাশি সাধারণ একাডেমিক শিক্ষাও প্রদান করা হয়।
নূরানী ক্লাস (نوراني):
নূরানী ক্লাসের উদ্দেশ্য হলো শিশুকে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার প্রাথমিক স্তর, যেখানে তারা কোরআনের হরফ (অক্ষর) ও তাযওয়িদ (উচ্চারণ) সঠিকভাবে শিখে। এখানে শিশুরা কোরআনের প্রতি অক্ষর ও শব্দের সঠিক উচ্চারণ শেখে।
নূরানী শিক্ষার মূল পদ্ধতি:
> হরফের পরিচিতি: শিশুরা প্রথমে আরবি বর্ণমালা শিখে, যাতে তারা কোরআনের অক্ষরগুলির সঠিক উচ্চারণ করতে পারে।> শুদ্ধ উচ্চারণ শেখানো: সঠিক তাযওয়িদ শেখানো হয়, যাতে শব্দগুলো সঠিকভাবে পড়া যায়।
> ধ্বনি ও শব্দের মিলন: শিশুরা বিভিন্ন ধ্বনি (ফাথাহ, জাম্মাহ, কাসরা ইত্যাদি) ও শব্দের মিলনে দক্ষতা অর্জন করে।
নূরানী ক্লাসে কোরআন শিখানোর পাশাপাশি ছাত্রদেরকে তাযওয়িদ বা সঠিক উচ্চারণের মাধ্যমে তাদের ধর্মীয় শিক্ষা সুদৃঢ় করা হয়।
নাজেরা ক্লাস (نازِرَة):
নাজেরা ক্লাসে শিশুরা কোরআন এর আয়াত বা সূরা শুদ্ধভাবে পড়ার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হয়। এখানে মূল লক্ষ্য হচ্ছে কোরআন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ও তাযওয়িদ অনুযায়ী পড়তে শেখানো। নাজেরা ক্লাসে কিছু মৌলিক ব্যাপার অন্তর্ভুক্ত থাকে:
> শুদ্ধ তিলাওয়াত (শুদ্ধ কোরআন পাঠ): শিশুদের কোরআন পড়ার সময় সঠিক উচ্চারণ এবং ধ্বনির সঙ্গতি শেখানো হয়।> মুখস্থ করার প্রাথমিক কাজ: কোরআনের ছোট ছোট সূরা বা আয়াত মুখস্থ করার চেষ্টা করা হয়, যাতে পরবর্তীতে বড় সূরাগুলি শুদ্ধভাবে পড়তে পারা যায়।
> ব্যাখ্যা ও অর্থ বোঝানো: কখনও কখনও কোরআনের কিছু অংশের তাফসির বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, যাতে শিশুরা পাঠের মর্ম ও অর্থ বুঝতে পারে।
মক্তব ও একাডেমিক বই:
নূরানী এবং নাজেরা ক্লাসের সাথে একাডেমিক শিক্ষাও দেওয়া হয়, যেমন সাধারণ স্কুল পাঠ্যবই পড়ানো। মক্তবের এই ক্লাসগুলোতে সাধারণভাবে শিশুদের মৌলিক গণনা, বাংলা বা ইংরেজি শেখানো হয়। তবে এতে লক্ষ্য থাকে, যাতে তারা একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামিক শিক্ষাও গ্রহণ করতে পারে।
একমাত্রিক প্রক্রিয়া:
এ ক্লাসগুলোতে শিশুরা একদিকে যেমন ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করে, তেমনি তাদের স্কুলের পড়াশোনাও আগিয়ে চলে। এতে তারা:
> কোরআন শুদ্ধভাবে পড়া শেখে।> সাধারণ একাডেমিক শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করে।
> ইসলামিক শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ অর্জন করে।
উপকারিতা:
> ধর্মীয় শিক্ষার ভিত্তি: শিশুরা ছোট থেকেই ইসলামী শিক্ষা পায় এবং সঠিকভাবে কোরআন পড়তে শেখে।> একাডেমিক দক্ষতা: একাডেমিক বই পড়ানোর মাধ্যমে শিশুদের মেধার বিকাশ হয়।
> নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ: ইসলামের নৈতিক শিক্ষা তাদের জীবনে সঠিক দিশা ও আচরণ প্রদর্শন করে।
উপসংহার:
নূরানী ও নাজেরা ক্লাস শুধু কোরআন শিখানোর জন্য নয়, এটি শিশুদের সমন্বিত শিক্ষা প্রদান করে, যাতে তারা ধর্মীয় ও একাডেমিক উভয় ক্ষেত্রেই সফল হতে পারে। এটি তাদের আধ্যাত্মিক ও মেধাগত বিকাশে সাহায্য করে, এবং জীবনে সঠিক পথ অনুসরণ করার প্রেরণা প্রদান করে।